মুসলিম বোনদের যা অনুধাবন করা অতি জরুরি
প্রতিটি মুসলিম বোনের জন্য অপরিহার্য হলো ইসলামতার কাছে কী চায় তা জানা। আল্লাহর অভিপ্রায় উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত হওয়া। ইসলাম চায় মানুষের চেতনা পরিচ্ছন্ন রাখতে। চায় নারীকে ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে রাখতে। ইসলাম নিশ্চিত করে নারীর ইহকালীন সার্বিক নিরাপত্তা এবং পরকালীন মুক্তি।
ইসলাম এমন একটি পুণ্যময় সমাজ বিনির্মাণে সচেষ্ট, যেখানে মানুষেরসহজাত লালসাকে উদ্বিপ্ত করা হয় না। উত্তেজিত করা হয়না তার কাম প্রবৃত্তিকে। এতে বরং সর্বত্র বিদ্যমান ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। এটি সুন্দর পথ বেষ্টিত। উত্তম চরিত্র মাধুর্যের বর্মে সুরক্ষিত। ইসলামে যথাযথভাবে লক্ষ্য রাখা হয় নারী-পুরুষের দৈহিক, মানসিক ও প্রাকৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতি। ইসলাম তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। প্রত্যেকের অধিকার ও প্রাপ্যও সুস্পষ্ট বলে দিয়েছে। নারী বা পুরুষ-কেউই যাতে রিপুর তাড়নায় বিপথগামী, ধ্বংসের পথযাত্রীনা হয় সেজন্য এই দীন বিয়েকে বানিয়েছে সর্বোত্তম ব্যবস্থা আর বৈবাহিক সম্পর্কের সৌন্দর্যকে বানিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আর নারী-পুরুষের জন্য হারাম করেছে ব্যভিচার ও এর প্রতি প্ররোচনা দানকারী এবং এর ইন্ধনদাতা সবকিছু। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ২৩}
এ লক্ষে নারীর জন্য করেছে পর্দা অপরিহার্য। নির্দেশ দিয়েছে তাদের গৃহাভ্যন্তরে থাকতে। নিষিদ্ধ করেছে সব ধরনের বেহায়া ও বেলেল্লপনা। এদিকে পুরুষদের আদেশ দিয়েছে তাদের কাছে আসার আগে অনুমতি গ্রহণ করতে। বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ থেকে নিজেকে সংযত করতে। কারণ, উভয় লিঙ্গের মধ্যেই প্রোথিত করা হয়েছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সহজাত আকর্ষণ। আল্লাহ তা‘আলা তা করেছেন মানব প্রজাতির বংশবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার স্বার্থে। এরই ভিত্তিতে নারী-পুরুষ উভয়ের রয়েছে তাদের স্বভাব-প্রকৃতি ও জৈবিক চাহিদা অনুপাতে প্রয়োজনীয় ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা।
যেহেতু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ দুর্বার ও দুর্দমনীয় বিষয়। আর প্রাণীজগতে- মানুষ যার শ্রেষ্ঠতম জাতি- উভয়ের মাঝে এ প্রবল ঝোঁকের অনেক কারণও বিদ্যমান, তাই ইসলাম এই আকর্ষণের উত্তাপকে আপাত শীতল এবং এ প্রবণতার বহ্নিকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থানিয়েছে। এটিকে শালীন ও শোভনীয় গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে। যাতে তার প্রয়োগ ঘটে কেবল পবিত্র ও নিরাপদ ক্ষেত্রে।
সেহেতু সব পরপুরুষ থেকে নারীর জন্য তারআল্লাহ প্রদত্ত ও অর্জিত সৌন্দর্য তথা সারা দেহ আবৃত রাখার বিধান বা শরয়ী পর্দা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।যাতে সে সুরক্ষিত থাকে দুর্বিনীত দৃষ্টি থেকে। একইভাবে তার জন্য সকল উত্তেজক আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং উলঙ্গপনা ও সৌন্দর্য প্রদর্শনকে বড় অপরাধ বিবেচনাকরা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, তাকে লাঞ্ছনা, স্বেচ্ছাচারিতা, অবাধ মেলামেশা, সন্দেহপূর্ণ বন্ধুত্ব ও বিষাক্তহাস্য-রসিকতা থেকে উন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে নবী পত্নীগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩২-৩৩}
এখানে নবীপত্নীগণ ও তাঁদের পরবর্তী সকল মুমিন নারীকে সম্বোধন করা হয়েছে।ইসলাম এ পন্থা অবলম্বন করেছে পর্দা, পবিত্রতা ও লজ্জার প্রচারে। অবনত দৃষ্টি, লজ্জাস্থান হেফাজত, নারী-পুরুষের আত্মিক শূচি রক্ষায়। নারীর প্রতি যৌন লোলুপতা রুখতে। ফিতনা-ফাসাদ ও সন্দেহ-অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি থেকে তাকে দূরে রাখতে।
নারীরা হলেন ইসলামী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মৌল। কারণ, তাদের ওপরই ন্যস্ত আগামী প্রজন্মের আবেগ-অনুভূতি এবং চিন্তা-চেতনাকেসুস্থ ও অমলিন রাখার দায়িত্ব। প্রবৃত্তি তথা রিপুর তাড়না ও অধোমুখী পাশবিক আচরণের দূষণ থেকে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার সুকঠিন যিম্মাদারিও অর্পণ করা হয়েছে তাদের ওপর। এভাবেই নারীরা অবদান রাখেন সমাজকে পবিত্র করতে এবং এর প্রকৃত সম্পদ ও মর্যাদা অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখতে।
এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নারীদের ওপর এসব দায়িত্ব অর্পণ করে, এর মাধ্যমে তাদের সম্মানিত বানিয়ে তাদেরকে চরিত্রহীনতার সব ধরণের সংশ্লেষ এবং অশান্তি সৃষ্টিকারী ক্ষুধার্ত পুরুষের চোরা দৃষ্টির আওতা থেকে যোজন দূরে অবস্থানে করার নির্দেশ দিয়েছেন। উপরন্তু তাদেরকে পাপাচারীদের নাগাল থেকে আপন ইজ্জত-আব্রু রক্ষার উপদেশও দিয়েছে এই পবিত্র ধর্ম। তাদেরউদ্বুদ্ধ করেছে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বৈধ ক্ষেত্র ছাড়া আপন লজ্জাস্থানকে যে কোনো মূল্যে সুরক্ষিত রাখতে।
তবে হ্যা, আল্লাহ তা‘আলা সম্মানিতা মহিলাদের জন্য সৌন্দর্য চর্চাও বৈধ করেছেন। কেন নয়, তিনিই তো তাদের স্বভাব এমন বানিয়েছেন যে, তারা সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য চর্চা করতে পছন্দ করে। ইসলাম এই সহজাত আগ্রহকে অস্বীকার বা অবদমন করে না। বরং একে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে। সে যেন তার সমুদয় রূপ-লাবণ্য ওসৌন্দর্য সুধা দিয়ে একমাত্র স্বামীরই হৃদয় হরণ করে।নারী যখন তার কমনীয়তা ও মোহময়তা স্বামীতেই সমর্পণ করে, তখন তা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় এবং ছাওয়াবের কাজ। এদিকে ইঙ্গিত করে হাদীছে যেমন বলা হয়েছে,আবূ যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘আর তোমাদের লজ্জাস্থানেও রয়েছে সদকা। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কেউ তার যৌন চাহিদা মেটাবে আর তাতেও তার জন্য ছাওয়াব হবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে করো সে যদি তা হারাম জায়গায় মেটায় তবে কি তার সে থেকে গুনাহ উপার্জিত হবে না? (অবশ্যই হবে) ঠিকসেভাবেই যখন সে তা হালাল জায়গায় মেটাবে, তার জন্য ছাওয়াব লিখা হবে। [মুসলিম : ৬০০১; মুসনাদ আহমদ : ২১৫১১]
আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে। আপন ইজ্জত রক্ষা করে এবং আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো আবৃত রাখে। যাতে কোনোঅসুস্থ অন্তর বা অসংযত দৃষ্টির অধিকারী পুরুষ তার টিকিটিও স্পর্শ করতে না পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশকরবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১}
একজন মুমিন নারী যার হৃদয় আল্লাহর নূরে উদ্ভাসিত, সে কখনো আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যে ছাড় দেয় না। সে কখনো আল্লাহ ও তদীয় রাসূলনির্দেশিত বিষয় পালনে কিংবা তাঁদের নিষেধকৃত বিষয় বর্জনে পিছ পা হয় না। যদিওবা তার মন চায় রূপ প্রদর্শনকরতে এবং সৌন্দর্য প্রকাশ করতে। কারণ, সজীব আত্মাধারী নারীরা পূর্বসূরী পুণ্যাত্মা নারীদেরই আদর্শ মানেন। যাদের সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
‘আল্লাহ হিজরতকারী অগ্রবর্তী নারীদের ওপর রহমত করুন।যখন তিনি নাযিল করলেন, ‘আর তারা যেন তাদের বক্ষের ওপর ওড়না টেনে দেয়’ তখন তারা তাদের নিম্নাংশের কাপড়েরপ্রান্ত ছিড়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে ওড়না বানিয়ে নেন।’ [বুখারী : ৮৫৭৪]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হজ অবস্থায় তাদের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করাযায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
‘আমরা ইহরাম অবস্থায়সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখনআরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ [আবূ দাঊদ : ৫৩৮১;বাইহাকী : ৩৩৮৮] ভেবে দেখুন পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা সচেতন যে হজের সময়ও (যেখানে সাধারণত: মহিলাদের মুখখোলা রাখতে হয় সেখানেও) এ ব্যাপারে তাঁরা শৈথিল্য দেখাতেন না।
প্রিয় মুমিন বোন, আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তোমার মর্যাদা উন্নীত করেছেন। তোমাররুচিকে মার্জিত করেছেন। তোমার সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন অনুভূতি দান করেছেন। তাই যে যুক্তিতেই হোক না কেন তুমি নিজেকে দেহ প্রদর্শনী ও পশুসুলভ উলঙ্গপনার জন্য প্রস্তুত করো না। আল্লাহ তা‘আলা তোমার ওপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেছেন, তোমাকে লাজুকতার ভূষণ এবং লজ্জা ও সৌন্দর্যের আভরণ দান করেছেন। যেখানে সর্ব সাধারণের রুচি বিকৃতি এবং পশু বৃত্তির প্রভাবে নগ্নতা ও উলঙ্গপনায় আগ্রহের আতিশয্য দেখা যাচ্ছে, সেখানে তোমার রুচিকে তিনি একজন মুমিন নারীর উপযুক্ত বানিয়েছেন। তোমার অনুভূতি পরিচ্ছন্ন আর চেতনা পরিশুদ্ধ।
প্রিয় ভগ্নী, তুমি তো আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছায় অগ্রসর হয়েছো। সৎ কাজের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে এসেছো। অবাধ্যাচারিনীরা যেখানে বল্গাহীন বিচরণ করছে, পাপাচারিণীরা যেখানে সৌন্দর্যের প্রদর্শনী আর পাপের ফেরিকরে করে ফিরছে, সেখানে তুমি দীনী বাধ্যবাধকতা ও আল্লাহর দাসত্বের দাবী পূরণ করে বিভ্রান্তির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছো। ফিতনার উৎসসমূহ উপড়ে ফেলেছো। দিয়েছো তাড়িয়ে উত্তেজনা ও উম্মক্ততাকে। অবিচল থেকেছো সম্মান ও মর্যাদার পথে। আঁকড়ে ধরেছো হেদায়েত নামের পাথেয়। আগ্রণী থেকেছো শূচিতা ও পবিত্রতায়। ধরে রেখেছো পর্দা ও লজ্জার ভূষণ। আখলাকের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছো আল্লাহর প্রকৃত দাসত্বের। আর নমুনা হয়েছো নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণীর :
‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিণী ওই বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেন।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৪}
হে ঈমানের দৌলতধন্য বোন, আল্লাহ ও রাসূলের দৃষ্টি নত রাখা এবং লজ্জাস্থান হেফাযতের নির্দেশ
Created at 2015-10-07 08:44:30
Back to posts
UNDER MAINTENANCE